অনুসর্গ,বিভক্তি,নির্দেশক. Anusarga-Bivokti-Nirdeshak-Suffix-Indicator

অনুসর্গ,বিভক্তি,নির্দেশক
অসীম বৈরাগ্য

প্রিয় ছাত্র-ছাত্রী, আশা করি সকলে ভালো আছো। এই ভিডিওতে আমি বাংলা ব্যাকরণ সম্পর্কে আলোচনা করব। বাংলা ভাষা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করার জন্য বাংলা ব্যাকরণ শিক্ষা আবশ্যিক। আর, বাংলা ব্যাকরণ এর প্রাথমিক অংশ হলো কিভাবে শব্দ গঠন করতে হয় এবং পদ গঠন করতে হয়। বাংলা শব্দ গঠন করার ক্ষেত্রে নির্দেশক এর ভূমিকা আছে। আর কোন শব্দকে পদে পরিণত করার ক্ষেত্রে বিভক্তি এবং অনুসর্গের গুরুত্ব আছে। এই ভিডিওতে আমি বিভক্তি, অনুসর্গ, নির্দেশক সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করব। উপযুক্ত উদাহরণ সহ আমি বিভক্তি, নির্দেশক এবং অনুসর্গ বিষয়টি তোমাদের বুঝিয়ে দেব এবং একই সঙ্গে বিভক্তি ও অনুসর্গ এবং নির্দেশক এর পারস্পরিক সম্পর্ক এবং পার্থক্য বিষয়ে আলোচনা করব। এই ভিডিওটি স্কিপ না করে শেষ পর্যন্ত দেখো, তাহলে বাংলা শব্দ এবং বাংলা পদ গঠনের কৌশলগুলি সম্পর্কে জানতে পারবে। আলোচনা শুরু করার আগে বলে রাখি, যে সমস্ত দর্শকবৃন্দ এবং ছাত্রবৃন্দ এখনো চ্যানেলটিকে সাবস্ক্রাইব করো নাই, তারা এই চ্যানেলটিকে সাবস্ক্রাইব করে নাও এবং আমার এডুকেশনাল ভিডিওগুলির নোটিফিকেশন পাওয়ার জন্য বেল আইকনটি একটিভ করে রাখ। চলো ভিডিওটি শুরু করা যাক।


অনুসর্গ:
প্রথমে আসি, অনুসর্গের আলোচনায়। বাংলায় কিছু অব্যয় পদ আছে, যেগুলি শব্দের পরে বসে বিভক্তির মতো কাজ করে। এই ধরনের অব্যয়গুলিকে অনুসর্গ বা পরসর্গ বা কর্মপ্রবচনীয় বলে।
যেমন - দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক, বিনা, চেয়ে ইত্যাদি।
অনুসর্গ দুই প্রকার:
1.শব্দজাত অনুসর্গ,
2.ক্রিয়াজাত অনুসর্গ।
শব্দজাত অনুসর্গ: বাংলায় ব্যবহৃত অধিকাংশ অনুসর্গ শব্দজাত অনুসর্গ।
শব্দজাত অনুসর্গের কয়েকটি ভাগ আছে।
এর একটি হল, তৎসম শব্দজাত অনুসর্গ। যেমন- অপেক্ষা,জন্য, দ্বারা, নিকট, নিমিত্ত, প্রতি, বিনা, মধ্যে, সঙ্গে।
তদ্ভব শব্দজাত অনুসর্গ: আগে, কাছে, পানে, বই, সাথে ইত্যাদি।
বিদেশি শব্দজাত অনুসর্গ: বাদে, বরাবর, বদলে ইত্যাদি।
এই শব্দ যাত অনুসর্গ গুলি ছাড়া, কতকগুলি অসমাপিকা ক্রিয়াপদ আছে যেগুলি বিভিন্ন কারকের অর্থ বোঝাতে বাক্যের মধ্যে ব্যবহার করা হয়।
যেমন: 1.করিয়া, করে।
 হাতে করে আমি জিনিসটা আনলাম।
লোহার চেয়ে   সোনা দামি।
2. দিয়া, দিয়ে।
ছেলেটি কলম দিয়ে লিখছে
3. ধরিয়া, ধরে।
আমি সারাদিন ধরে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।
4. বলিয়া, বলে।
সে কথা দিয়েছিল বলে এসেছে।
5.লাগিয়া, লেগে।
সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধলাম।
6. হইতে, হতে।
গাছ হতে ফল পড়ল।
তাহলে তোমরা দেখলে, অনুসর্গ কাকে বলে, অনুসর্গ কত প্রকার হতে পারে। এখন, অনুসর্গের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করছি:
1.অধিকাংশ সময় অনুসর্গ নাম পদের পরে বসে।
2.তবে কখনো কখনো অনুসর্গ নাম পদের আগে বসতে পারে। যেমন- বিনা মেঘে বজ্রপাত।
3.অনুসর্গ শব্দের অর্থের পরিবর্তন করে না।
4.অনুসর্গের নিজস্ব অর্থ আছে। তাই বাক্যের মধ্যে অনুসর্গের স্বতন্ত্র প্রয়োগ আছে।
5.অনুসর্গ বিভক্তির মতো কাজ করে।
6. শব্দের পরে শুধু একটা অনুসর্গের ব্যবহার করা যায়।
7.  অনুসর্গ অব্যয় জাতীয় এবং ক্রিয়াজাত দুই প্রকার হতে পারে।
এই শব্দজাত অনুসর্গগুলি ছাড়া, কতকগুলি অসমাপিকা ক্রিয়াপদ আছে যেগুলি বিভিন্ন কারকের অর্থ বোঝাতে অনুসর্গের মতো ব্যবহার করা হয়।
যেমন- করিয়া, করে।
হাতে করে আমি জিনিসটা আনলাম।
চেয়ে: লোহার চেয়ে সোনা দামি।
দিয়া, দিয়ে: ছেলেটি কলম দিয়ে লিখছে।
ধরিয়া, ধরে: আমি সারাদিন ধরে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।
বলিয়া, বলে: সে কথা দিয়েছিল বলে এসেছে।
লাগিয়া: সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধলাম।


বিভক্তি:
অনুসর্গের পরে এখন, আমি বিভক্তির আলোচনা করছি। বাংলা পদ গঠন করার সময় এবং কারক নির্ণয় করার সময় বিভক্তির আলোচনা আবশ্যিকভাবে এসে পড়ে।
বিভক্তি হলো ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছ, যা শব্দের পরে যুক্ত হয়ে শব্দকে পদে পরিণত করে এবং বাক্যে পদটির কারক চিনিয়ে দেয়। বিভক্তি শব্দটির সাধারণ অর্থ বিভাজন করা। বাংলা ভাষায় কারক বিভক্তি আছে মাত্র পাঁচটি। যেমন- শূন্য, এ, কে, রে, এবং তে। বাংলায় কোনো কারকের জন্য নির্দিষ্ট বিভক্তি নেই। শূন্য বিভক্তি এবং এ বিভক্তি বাংলায় প্রায় সকল কারকে প্রয়োগ করা যায়। যেসব বিভক্তি একাধিক কারকে ব্যবহার করা হয়, তাদের তির্যক বিভক্তি বলা হয়। যেমন এ, তে, কে ইত্যাদি। বিভক্তি দেখে বাংলায় কারক নির্ণয় করা জটিল, অর্থ বুঝে কারক নির্ণয় করতে হয়।
শব্দ বিভক্তি ছাড়া, আছে ধাতু বিভক্তিবিভক্তি। পুরুষভেদে যেসব বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি শব্দ ও ধাতুর পরে যুক্ত হয়ে ক্রিয়া পদ গঠন করে, সেই বর্ণ বা বর্ণসমষ্টিকে ধাতু বিভক্তি বা ক্রিয়াবিভক্তি বলা হয়। যেমন “কর” ধাতুর সাথে ই বিভক্তি যোগ করলে হয় – করি। আবার, “কর” ধাতুর সঙ্গে এ বিভক্তি যোগ করলে হয় করে। এ,ই- এগুলি হল ধাতু বিভক্তি।
অনুসর্গ এবং বিভক্তির আলোচনার পরে এখন আমি অনুসর্গ এবং বিভক্তির মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করছি।
1. শব্দ বিভক্তির নিজস্ব কোন অর্থ নেই, অনুসর্গের নিজস্ব অর্থ আছে।
2. শব্দ বিভক্তির স্বতন্ত্র প্রয়োগ নেই, কিন্তু অনুসর্গের স্বতন্ত্র প্রয়োগ আছে।
3. শব্দ বিভক্তি শব্দের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যায়, অনুসর্গ পৃথকভাবে বসে।
4. শব্দ বিভক্তি সব সময় শব্দের শেষে বসে, অনুসর্গ কখনো কখনো শব্দের পূর্বে বসতে পারে। যেমন - বিনা মেঘে বজ্রপাত. এখানে বিনা এই অনুসর্গটি মেঘ এই বিশেষ্য পদের পূর্বে বসেছে।
নির্দেশক:
এমন অনেক শব্দ বা শব্দাংশ আছে যেগুলি বিশেষ্য, বিশেষণ ও সংখ্যাবাচক বিশেষণ এর পরে যুক্ত হয়ে বিশেষ্য বা বিশেষণকে বিশেষভাবে নির্দেশ করে, তাদের নির্দেশক বলে। যেমন – টি, টা খানি, খানা, টুকু, টুকুন, গাছ, গাছা, গাছি ইত্যাদি।
বাংলা বাক্যে টি এবং টা একই অর্থ বহন করে। যেমন- একটা কলম কিনেছি। একটি কলম কিনেছি।
পরিমাণে  অল্প আদর বুঝাতে টুকু এবং টুকুন এই দুটি নির্দেশক ব্যবহার করি। যেমন- এই টাকাটুকু সম্বল করে এতোটুকুন ছেলে বাজারে এসেছে।
খান, খানি, খানা- এই তিনটি নির্দেশক আদর, অবজ্ঞা, তুচ্ছতা ইত্যাদি বোঝাতে ব্যবহার করি। যেমন - বাড়িখানা খুব সুন্দর। একটুখানি জায়গায় এত বড় বাড়ি করেছ!
নির্দেশকের সঙ্গে বিভক্তির পার্থক্য আছে:
1. বিভক্তি কারক নির্দেশ করতে পারে, নির্দেশক কারক নির্দেশ করতে পারে না।
2. কোন শব্দের সঙ্গে বিভক্তি যোগ করলে পদ তৈরি হয়, শব্দের সঙ্গে নির্দেশক যোগ করলে পদ তৈরি হয় না।
3. নির্দেশক কোন শব্দের বচন নির্দেশ করে, বিভক্তি বচন নির্দেশ করেনা।
পার্থক্য থাকলেও নির্দেশকের সঙ্গে বিভক্তির মিল আছে।
1. নির্দেশক এবং বিভক্তি উভয়ের কোন অর্থ নেই।
2. নির্দেশক এবং বিভক্তি উভয়ই শব্দের পরে বসে।
নির্দেশকের সঙ্গে অনুসর্গের পার্থক্য আছে :
1. অনুসর্গের নিজস্ব অর্থ আছে, নির্দেশক এর নিজস্ব অর্থ নেই।
2. অনুসর্গ শব্দের মধ্যে স্বতন্ত্রভাবে বসতে পারে, নির্দেশক শব্দের মধ্যে পৃথকভাবে বসতে পারে না।
3. অনুসর্গ হলো অব্যয় পদ, নির্দেশক হলো অর্থহীন ধ্বনিগুচ্ছ বা ধ্বনি।

সমাপ্ত।

Previous Post
Next Post
Related Posts