প্রলয়োল্লাস PRALOYOLLAS FOR MADHYAMIK STUDENTS.

বাংলা সাহিত্য আলোচনা 




 "প্রলয়োল্লাস"
 "প্রলয়োল্লাস"






 প্রশ্ন প্রলয়ল্লাস কবিতায় নজরুল ভয়ংকরের আসার যে বর্ণনা দিয়েছেন তা লেখ 


 কাজী নজরুল ইসলাম প্রলয়ল্লাস কবিতা পরাধীনতার জ্বালা মোচনের জন্য মহাকালের আগমনের বন্দনা করেছেন  মহাকাল সর্বনাশী ক্ষমতার দ্বারা সমাজ থেকে অসুর নিধন করবেন  এই কবিতায় বিপ্লব  মহাকাল একাকার হয়ে গেছে ।

রনোন্মত্ত মহাকাল প্রলয়ের নেশা নত্য করছেন  তিনি ধমক এনে সিন্ধুপারের আগল ভেঙে ফেলেছেন  চণ্ডরূপ মৃত্যু গ্রহণ অন্ধকূপে মশাল জ্বেলে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে এগিয়ে আসছেন  তার কেশের রং ঝামর বর্ণ  কেশের ঝাপটায় যেন গগন কেঁপে ওঠে  জ্বালামুখী সর্বনাশী ধুমকেতু এই প্রলয়ের দেবতাকে স্বাগত জানাচ্ছে  প্রলয়র মহাকালের কোলে রক্তমাখা কৃপাণ ঝুলছে  তার অট্টহাসিতে ভয় পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে আছে ।

দ্বাদশ রবির তেজ  ্বালা যেন তার নয়নমণিতে শোভা পাচ্ছে  তার পিঙ্গল জটাজালে দিগন্তরের কাঁদন লুটিয়ে পড়ছে । চোখের জলে সাত সমুদ্রের বিশালতা  বিশ্বমায়ের আসন তার বাহুর উপর অবস্থান করছে  মাভৈঃ মন্ত্র ধ্বনিত হচ্ছে পৃথিবীজুড়ে  জ্বরায় মরা মুমূর্ষুদের নতুন করে বাঁচতে শেখাবে প্রলয়ংকর  রুদ্রমূর্তিতে প্রলয়ের মত্ততায় অন্ধকার দূর করে পরাধীন ভারতবর্ষের জন্য শান্তি ও সুখ নিয়ে আসবে ।

মহাকালের সারথির রক্ত-তড়িৎ-চাবুকের আঘাতে ঘোড়া কেঁদে উঠছে । তার কান্নার ধ্বনি আকাশের বজ্র ও ঝড়-তুফানের সাথে তুলনীয়  মহাকালের রথের ঘোড়ার ক্ষুরের দাপটে নীল আকাশে উল্কা খসে পড়ছে । অন্ধ কারাগারের বন্ধ কুপে আলো জেগে ঠেছে  কবি রথের চাকার ঘরঘর ধ্বি শুনতে পাচ্ছেন  জীবনহারা অসুন্দরকে ছেদন করে নতুন সৃজন করতে তার শুভ আগমন  ভাঙ্গা-গড়া তার নিত্যলীলা  তার ভয়ঙ্কর রূপের মধ্যে চির সৌন্দর্য বিরাজ করছে  কবি এভাবে ভয়ংকরের আসার বর্ণনা করেছেন ।



প্রশ্ন প্রলয়ল্লাস কবিতা নজরুলের কবি মানসিকতার পরিচয় দাও ।


কাজী নজরুল ইসলামের লেখা প্রলয়ল্লাস কবিতাটি স্বাধীনতা প্রাপ্তির জন্য বিপ্লবের ভাবনায় পূর্ণ  কবিতাটিতে মুক্তিযুদ্ধের সৈনিকদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন কবি  পরাধীনতার বন্ধন মোচনের জন্য তিনি ভারতমাতার বীর ছেলেদের উৎসাহিত করেছেন  কঠোর সংগ্রামের মহাব্রত করতে হবে, তবে স্বাধীনতার সূর্য ভারতের আকাশে উদিত হবে ।

 নজরুল স্বাধীনতার দিনে পৌঁছানোর জন্য বিপ্লবের প্রতি আস্থা রেখেছেন  বিপ্লবের রক্তস্নাত পথ দিয়ে জাতির মুক্তি ঘটবে  এই কবিতায় কবির ইতিবাচক মনোভাবটি স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে  তিনি বিপ্লবের বাণীবাহি বিপ্লবীদের মহাকালের সাথে তুলনা করেছেন  মহাকালের প্রলয়নাচন ধ্বংসের স্পষ্ট বার্তা কবি শুনতে পেয়েছেন  কালবৈশাখীর ঝড়ে পরাধীনতার  জীর্ণ বাঁধন উড়ে যাবে  সিন্ধুপারের সিংহদ্বারের গল ভেঙে পড়েছে  মহাকাল বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে অন্ধকূপের আঁধার ঘোচাতে আসছেন  রক্তমাখা কৃপাণ ঝুলছে তার কোলে  তার চোখে যেন সূর্যের মতো তেজ বিকিরণ হচ্ছে  মুমূর্ষুদের সঞ্জীবনী সুধা দিতে মহাকালের এই প্রয়াস ব্যর্থ হবে না 

মহাকাল যেন কবির স্বপ্নের নায়ক যিনি ভারতমাতাকে হৃত গৌরব ফিরিয়ে দেবেন  ইংরেজদের বিরুদ্ধে সর্বান্তকরণ সংগ্রাম চান তিনি  তাই বিপ্লবের ও বিপ্লবীদের জয়ধ্বনিতে মুখর হয়েছেন কবি  বিপ্লবের বাণীকে তিনি সমাজে সবার মনে ছড়িয়ে দিতে চান  সকলে মিলে স্বাধীনতার জন্য মরণপণ সংগ্রাম করে ভারতের বুকে স্বাধীন যুগ স্থাপন করতে তিনি প্রয়াস হয়েছেন  আর সকলকে বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষিত করতে চেয়েছেন  কবি নজরুলের বিদ্রোহী সত্তা এখানে সুন্দরভাবে প্রকাশ পেয়েছে  একইসঙ্গে স্বাধীনতার স্বপ্ন ঘনিয়ে এসেছে তার দুচোখে ।

 প্রশ্ন বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ঙ্কর- ভয়ঙ্কর কে ? তার আগমনের কারণ কি ?


নজরুল ইসলাম তার লেখা প্রলয়োল্লাস কবিতা পরাধীনতার অন্ধকারের অবসানে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন দেখেছেন কিন্তু শান্তির সরল পথে স্বাধীনতা আসবে না মহাপ্রলয়ের রণ-ভেরী বেজে উঠেছে, মহাকাল প্রলয় নেশায় মত্ত হয়ে যেন অসুররূপী ইংরেজ শক্তিকে পরাভূত করতে আসছেন মুক্তি যুগের অগ্রদূত ভারত মাতার বীর বিপ্লবী সন্তানদের শক্তিকে কবি বৃহৎ পটভূমিকায় এঁকেছেন । মহাকালের রূপ ধরে বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে তারা স্বাধীনতার পথের যাত্রী তারা দুরন্ত কালবৈশাখীসম দেশ উদ্ধারের স্বপ্নে বিভোর হয়ে তাঁরা অতি ভয়ঙ্কর, প্রলয় পাগল ।

 প্রশ্ন ওই নতুনের কেতন ওড়ে কালবোশেখীর ঝড়”।- তাৎপর্য লেখ ।


প্রলয়ল্লাস কবিতা নজরুল নবীনের জয়গান গেয়েছেন ভারতবাসীর পরাধীনতার গ্লানি মোচনের জন্য নবীন বিপ্লবীগ মহাপ্রলয় মত প্রলয়ের নেশা নত্য-পাগল মহাকালের রূপ ধরে তারা অসুররূ ইংরেজদের নিধনে বদ্ধপরিকর । বিপ্লবের আবেগ যেন কালবোশেখীর আগমন সূচিত করছে ভারতের পরাধীনতার শৃংখল ও দীনতা কালবৈশাখীর ঝড়ে উড়ে যাবে ভারত মাতার বীর সন্তানদের আত্মত্যাগের ও বিপ্লবের নিশান উছে কালবৈশাখী দুর্দান্ত ঝড়ে । এভাবে বিপ্লবীদের প্রতি অকুণ্ঠ হৃদয় সমর্থন জানিয়েছেন কবি ।

 প্রশ্ন তোরা সব জয়ধ্বনি কর”।- কবির এরূপ নির্দেশের কারণ কি ?


কবি নজরুল অগ্নিবীণা কাব্যের প্রলয়ল্লাস কবিতা বিপ্লবের আবেগ ও বিপ্লবীদের জয়গান গেয়েছেন কবি স্বপ্ন দেখেছেন, বিপ্লবের পূর্ণ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ভারতের স্বাধীনতার সূর্য উদিত হবে তবে এই বিপ্লব কোন একক মানুষের কীর্তি নয়, সকল ভারতবাসী স্বাধীনতার স্পৃহার প্রতি উদ্বুদ্ধ হলে, হৃদয়ের মধ্যে বিপ্লবের প্রদীপ জ্বালাতে পারলে, তবে পরাধীনতা মোচন সম্ভব হবে তাই কবি সকলকে বারবার জয়ধ্বি দিতে বলেছেন, যাতে সকলেই বিপ্লবের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে সকল ভারতবাসীকে স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রাঙ্গণে দেখতে চেয়েছেন তিনি ।




প্রশ্ন ওরে ওই স্তব্ধ চরাচর”।- চরাচর স্তব্ধ কেন ?


কাজী নজরুল ইসলামের লেখা প্রলয়োল্লাস কবিতাটি একটি দেশপ্রেমের কবিতা এই কবিতায় স্বাধীনতার মুক্তি পিয়াসী বিপ্লবীদের বীরত্বকে মহাকালের প্রলয় নাচনর রূপকে বর্ণনা করেছেন ভয়ঙ্কর মহাকাল যেন প্রলয়ের নেশায় মত্ত । তার কোলে আছে রক্তমাখা তরবারি । তাঁর কেশের ঝাপটায় গগন দুলে ওঠে, আর জ্বালামুখী ধুমকেতু তার পুচ্ নাচিয়ে মহাকালের বা মুক্তিদাতার আগমন সূচিত করেছে প্রলয়ের কালে মহাকালরূপী বিপ্লবীদের অট্টরোলে চরাচর স্তব্ধ হয়ে আছে চরাচর যেন বিপ্লবের দুর্দম শক্তিকে নতমুখে স্বাগত জানাচ্ছে ।

প্রশ্ন আসবে ঊষা অরুণ হেসে”।- তাৎপর্য লেখ ।


প্রলয়ল্লাস কবিতা কাজী নজরুল পরাধীনতার অন্ধকার মোচনের স্বপ্ন দেখেছেন । বিপ্লব যেন মহাকালের রূপ ধরে ইংরেজ নিধন করতে আসছেন মহাপ্রলয়ের মত্ততা চরাচর স্তব্ধ হয়ে আছে মাভৈঃ ধ্বনিতে স্বাধীনতার অনুরণন শুনতে পেয়েছেন কবি ভারতমাতার দুঃখ মোচন করতে তার বীর সন্তানরা মহাকালের রূপ ধরে মহাপ্রলয় মত্ত । জরায় মরা ভারতবাসীর পরাধীনতার শৃংখল ভাঙতে তারা বদ্ধপরিকর বিপ্লবীদের এই সংগ্রাম ব্যর্থ হবে না তাদের রক্তস্নাত বিপ্লবের পথ দিয়ে একদিন স্বাধীনতা আসবে বর্তমানের পরাধীনতার গ্লানিময় মহানিশার অবসান হবে এবং স্বাধীনতার নতুন সূর্য উদিত হবে- এমনই প্রত্যাশা করেন কবি নজরুল মহাদেবের কপালে পিঙ্গল চাঁদ সেদিন স্বাধীনতাসুখের পূর্ণিমায় আমাদের ঘর ভরিয়ে দেবে ।

 প্রশ্ন দ্বাদশ রবি বহ্নিজ্বালা ভয়াল তাহার নয়ন কটায়”।- তাৎপর্য লেখ ।


নজরুল ইসলামের লেখা প্রলয়ল্লাস কবিতাটি স্বাধীনতা সংগ্রামের ভাবনায় পূর্ণ এই কবিতায় বিপ্লবের বার্তাবহ বিপ্লবীদের মহাকালের সাথে তুলনা করা হয়েছে বিপ্লবীদের স্বরূপ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তাদের বীরত্বকে আকাশের সূর্যের সাথে তুলনা করেছেন আকাশের বুকে দীপ্তমান সূর্যের মতো বিপ্লবীরা আপন শক্তিতে ও তেজে উজ্জ্বতাদের নয়ন থেকে অগ্নি বর্ষিত হচ্ছে । সেই আগুনে পরাধীনতার অপমান জ্বলে যাবে এভাবে বিপ্লবীদের জয়গান করেছেন তাদের ঐকান্তিক আত্মত্যাগের মাধ্যমে নবযুগের সূচনা ঘটতে চলেছে ।

প্রশ্ন মাভৈঃ শব্দের অর্থ কি ? কবি কেন এই শব্দটি উল্লেখ করেছেন ?


মাভৈঃ শব্দের অর্থ নির্ভয় বা ভয় করোনা ।

কবি নজরুল স্বাধীনতা সংগ্রামের মহাক্ষেত্রে অসুররূ ইংরেজ নিধনের জন্য বিপ্লবীদের মরণপণ সংগ্রাম উদ্বোধন করেছেন প্রলয়ল্লাস কবিতা । কবি ভয় না করার নির্দেশ দিয়েছেন  নির্ভীকচিত্তে প্রলয় সৃষ্টি করতে হবে  ভয়ানক মহাকালের প্রলয়নৃত্যের কারণে চরাচর স্তব্ধ  পরাধীনতার বন্ধন মোচনের দিন সমাগত  প্রলয়ের শেষে জয়টিকা বিপ্লবীদের কপালে শোভা পাবে  মরকে জয় করে এই বিপ্লবীরা হয়ে উঠবে মরণজয়ী  সেদিন পূর্ণিমা ভাসবে ভারতবর্ষ  অনাগত স্বাধীন ভারতের স্বপ্নকে সার্থক করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের সৈনিকদের ভয়হন হতে হবে ।

প্রশ্নঃ ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর- তাৎপর্য লেখ ।


প্রলয়ল্লাস কবিতায় কবি নজরুল মহাকালের রুদ্র রূপর বন্দনা গান করেছেন  মহাকাল অশুভ শক্তিকে বিনাশ করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছেন  তার আগমনের ধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন কবি  রূপকের আশ্রয় কবি বিপ্লবকে স্বাগত জানিয়েছেন  ভারত মায়ের দামাল ছেলেরা ইংরেজ র অসুরদের নিধন করতে মহাকালের রূপ ধারণ করেছেন  কিন্তু, এই ধ্বংস দেখে পরাধীন ভারতবাসীর ভয় পাবার কারণ নেই  ভারতবাসীকে স্বাধীনতা দেবার জন্য এই প্রলয় আসছে  সমাজের বুকে নতুন দিন আসছে, যা হবে স্বাধীনতার সুখে পূর্ণ  জীবনহারা অসুন্দরকে নিধন করার জন্য মহাকালের আগমন হচ্ছে  জরায় মরা ভারতবাসীর আনন্দের দিন এটি ।

 প্রশ্ন রনিয়ে ওঠে ঘোড়ার কাঁদবজ্রগানে ঝড়-তুফানে প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা কর ।


প্রলয়ল্লাস কবিতায় কবি নজরুল স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন দেখেছেন  স্বাধীনতা-উত্তরকালে চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় ভারতবাসীর ঘর আনন্দে ভরে উঠবে  কিন্তু, স্বাধীনতা শান্তির মসৃণপথে আসবে না  মহাপ্রলয়ের মহাপ্রান্তরে আত্মত্যাগ ও বিপ্লবের হাত ধরে আসবে স্বাধীনতা  সমাজের বুকে মহাকালের প্রলয়নৃত্য ঘটতে চলেছে ।  মহাকালের সারথি স্বাধীনতা কালে অতি দ্রুত পৌঁছানোর জন্য রক্ত তড়িৎ চাবুক দিয়ে সময় রূপ ঘোড়াকে আঘাত করছে  আর চাবুকের আঘাতে মহাকালের রথের ঘোড়া যেন কেঁদে উঠছে যা বজ্রগান, ঝড়-তুফানের সাথে তুলনা করেছেন কবি  তার খুরের আঘাতে উল্কা খসে পড়ছে  এভাবে পরাধীনতার পাষাণ ভেদ করে একদিন স্বাধীনতার আগমন ঘটবে




 বাংলা সাহিত্য আলোচনা,
Previous Post
Next Post
Related Posts