বাংলা সাহিত্য আলোচনা । প্রবন্ধ রচনা । শব্দ সংখ্যা ৩৪৫টি । সপ্তম শ্রেণি ।
দেশ ভ্রমণ ।
দেশ ভ্রমণ । Excursion . |
ভূমিকা ঃ
অজানাকে জানার আকাঙ্ক্ষা ও অপ্রাপনীয়কে পাওয়ার আকাঙ্খায় যুগে যুগে মানুষ ঘর ছেড়েছে । বিপুলা পৃথিবী নানাবিধ বৈচিত্রের উপহার সাজিয়ে রেখেছে আমাদের জন্য । দেশ ভ্রমণের মাধ্যমে মানুষ পৃথিবীর বৈচিত্রকে উপলব্ধ করতে চায় । সৌন্দর্যপিয়াসী মানুষ ছোট্ট গণ্ডিতে আবদ্ধ না থেকে বিশ্ব মানবের সাথে মিলিত হতে চায় । এভাবে মানুষ অনেকের মধ্যে নিজের অবস্থানটি বুঝে নিতে প্রয়াসী হয় ।
ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান ঃ
ভ্রমণের জন্য প্রয়োজন একটি উৎসাহী মন । পৃথিবীর রূপ দেখার দৃষ্টি এবং সৌন্দর্য উপভোগের যোগ্যতা থাকলে তবেই দেশ ভ্রমণ করা যায় । এইসব মানসিক দিক ছাড়াও একটি বাস্তব দিকও এর সাথে যুক্ত আছে । তা হল, ভ্রমণের জন্য উপযোগী অর্থের স্বাধীনতা । তবে অর্থ থাকলেই মানুষ সফলভাবে ভ্রমণ করবে এমনটা হয় না । অন্তর্নিহিত অনুপ্রেরণা মানুষকে চেনা জীবনের বাইরে পা ফেলতে বাধ্য করে ।
ভ্রমণের সুফল ঃ
ভ্রমণের মাধ্যমে মানুষের অভিজ্ঞতার ভান্ডার সম্পূর্ণ হয় । গণ্ডিবদ্ধ জীবন মানুষকে যথার্থ জীবনের আশ্বাস দেয় না । রূপের ঐশ্বর্যের ডালি সাজিয়ে অপরূপা পৃথিবী মানুষকে আহ্বান করে । অদেখাকে দেখার জন্য পিয়াসীমন উন্মুখ থাকে । ফলস্বরূপ, পৃথিবীর নতুন নতুন রূপ আবিষ্কার করি আমরা । এভাবে কত দেশ, নগর, প্রান্তর আবিষ্কার হয়েছে এবং হয়ে চলেছে । ভাস্কো-দা-গামা, কলম্বাস, আমেরিগো ভেসপুচি প্রমূখ পর্যটক পৃথিবীর অজানা স্থান সম্পর্কে অনুসন্ধিৎসু হয়েছিলেন বলেই আমেরিকা, ভারত, নিউজিল্যান্ড এরকম কত দেশ ও স্থান মানুষের জ্ঞানের সীমা আসতে পেরেছে । ভ্রমণ আমাদের মানসিক চাহিদা পূর্ণ করে মনকে সতেজ করে । বিশ্ব মানবের সাথে মিলনের ফলে মনের ক্ষুদ্রতা দূর হয়, বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ জেগে ওঠে, জাতীয়তাবাদের ধারণাটি আমাদের মনে সত্যরূপে প্রতিষ্ঠা পায় । ছকভাঙ্গা জীবনের প্রতি দুর্বার আকর্ষণ মানুষকে চার দেয়াল থেকে বের করে আনে । মন যেন তখন বলে ওঠে,
‘’হারে রে রে রে রে আমায় ছেড়ে দেরে দেরে
যেমন ছাড়া বনের পাখি মনের আনন্দে রে ।’’
উপসংহার ঃ
আমাদের জীবনে নানারূপ বাধা আছে । সেগুলিকে অতিক্রম করতে পারলে জীবনের নব তাৎপর্য খুজে পাওয়া যায় । মানুষের মনে সর্বদাই উচ্চারিত হয়
‘’থাকবো না আর বদ্ধ ঘরে
দেখব এবার জগৎটাকে ।’’
জগৎ সম্পর্কে পরিপূর্ণ উপলব্ধি না ঘটলে জীবনের পুনর্মূল্যায়ন করা সম্ভব নয় । তাই খাঁচার পাখিরূপ মানুষ নিত্য বনের পাখি রূপ অজানাকে জানার নেশায় বদ্ধজীবনের কারা ভেঙে স্রোতস্বিনীর মতো এগিয়ে চলে ।